বিশ্ব বাণিজ্যে গাড়ি রপ্তানিতে জাপানকে টপকে শীর্ষে এলো চীন

সারা বিশ্বে গাড়ি রপ্তানিকারক হিসেবে ২০২৩ সালে জাপানকে টপকিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে চীন দেশ। চায়না প্যাসেঞ্জার কার অ্যাসোসিয়েশন (সিপিসিএ) এই তথ্য দিয়েছেন। গত বছর চীনের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি ও চেরির ব্যবসা ভালো হওয়ার কারনে গাড়ি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরের তালিকায় উঠে এসেছে চীন।

সিপিসিএ একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, বিগত ২০২৩ সালে চীন পৃথিবীর শীর্ষ গাড়ির বাজার থেকে শীর্ষ গাড়ি রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে। গেল বছরে চীনের নতুন গাড়ি রপ্তানির সংখ্যা প্রায় ৬২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালে সর্বমোট ৩৮ লাখ ৩০ হাজার নতুন গাড়ি বিশ্বে রপ্তানি করেছে চীন।

Import Regulation for Cars From Japan and china

সিপিসিএর তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের নতুন-পুরোনো মিলিয়ে চীন সর্বমোট গাড়ি রপ্তানি করেছে ৫২ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০২ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত বছর নতুন এবং পুরোনো সব মিলিয়ে জাপানের মোট গাড়ি রপ্তানি করেছে মোট ৪৩ লাখ ইউনিট।

এর মানে দাড়ালো, চীন এখন বিশ্বের গাড়িশিল্পের নতুন একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে, যদিও গত বছর তাদের এই উত্থানের কারণ বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি বিক্রির পরিমান বেড়ে যাওয়া। গত বছরের শেষ বা চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের কোম্পানি বিওয়াইডি বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বাজারে ইলন মাস্কের গাড়ি কোম্পানি টেসলাকে হটিয়ে শীর্ষ স্থানে উঠে আসে। যদিও তাদের গাড়ি বিক্রি হয়েছে মূলত চীনের বাজারে। চীনের গাড়ি রপ্তানি বৃদ্ধির পেছনে টেসলারও খুব ভাল ভূমিকা আছে। গত বছর টেসলা চীনের কারখানায় উৎপাদিত ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮০ টি গাড়ি রপ্তানি করেছে।

এদিকে গাড়ির বাজারে চীনের উত্থান নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বেশ আতঙ্কিত। তাদের ভয় হচ্ছে, চীনের এই গাড়ি রপ্তানির উত্থানে তাদের দেশের গাড়ি কোম্পানিগুলো ব্যাপক বিপাকে পড়বে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোপীয় কমিশন চীনের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তাদের অভিযোগ হল, চীনের এই গাড়ি কোম্পানিগুলো সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি পায়, সে জন্য তারা চীনের রাজধানী বেইজিংকে সুরক্ষাবাদী আখ্যা দেয়। অন্যদিকে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বিদ্যুৎ চালিত গাড়িসহ বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

বিশ্বে গাড়ি রপ্তানির পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারেও গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। ২০২৩ সালে দেশটির অভ্যন্তরীণ গাড়ি বিক্রি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২১ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ইউনিটে উন্নীত হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এইরুপ অবনতি হওয়ায় ক্রেতা টানতে গাড়ি কোম্পানিগুলো বড় ধরনের অফার এবং বিশাল ছাড়ও দিয়েছে। ২০২২ সালে চীনে শতভাগ ব্যাটারিচালিত গাড়ি বিক্রি বেড়েছিল ৭২ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। এইদিকে ২০২৪ সালে চীনের বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রি ৬৩ শতাংশ বাড়তে পারে বলে বাজার বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

চীনের বিওয়াইডি কোম্পানির ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ মালিকানা ওয়ারেন বাফেটের বার্কশায়ার হাথাওয়ে কোম্পানির। গত বছর এই কোম্পানি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপে আগ্রাসী বিপণন চালিয়েছে, যদিও তাদের বেশির ভাগই বিক্রি হয়েছে চীনে। দেশের ভেতরে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে তারা পরিবেশকদের এবং ডিলারদের বিপুল হারে প্রণোদনা আর অফার দিয়েছে। তবে বিওয়াইডির তুলনায় টেসলার বিক্রয়ব্যবস্থা অধিকতর দক্ষ বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এইদিকে গত বছর চীনের বাজারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বেশির ভাগ গাড়ি কোম্পানির বিক্রি অনেক কমে গিয়েছে। চীনের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বাজারে নতুন নাম এসেছে আর তা হলো বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন কোম্পানি শাওমি। গত মাসেই তারা বাজারে প্রথম গাড়ি এনেছে এবং ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি গাড়ি কোম্পানির একটি হতে চায় আর সেই অবিচ্ছেদ লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে প্রতিটা দিনই।

বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে এই সংবাদটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)

নবীনতর পূর্বতন