"রিওভাইরাস" এই পোস্টে জেনে নিন লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে

খেজুরের কাঁচা রস পান করে প্রতি বছর অনেকেই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সম্প্রতি, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) নিপাহ ভাইরাসের মতো উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে। যদিও তাদের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি, তবে পাঁচজনের শরীরে রিওভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ১৯৫০ সালে প্রথম রিওভাইরাস শনাক্ত করা হয়। শীতকালে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশ আইইডিসিআর জানিয়েছে, আক্রান্ত পাঁচজনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা যায়নি এবং চিকিৎসা শেষে তারা সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন।


রিওভাইরাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা, বাদুড় থেকে ছড়ানো ভাইরাস কীভাবে প্রতিরোধ করবেনে

রিওভাইরাস কী?

রেসপিরেটরি এন্টেরিক অরফান ভাইরাস, সংক্ষেপে রিওভাইরাস নামে পরিচিত। সাধারণত এই ভাইরাস সরাসরি কোনো রোগ সৃষ্টি করে না, তবে এটি অন্যান্য রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে যেখানে বাদুড়ের সংখ্যা বেশি, সেখানে এটি স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কীভাবে ছড়ায়?

বাংলাদেশে শনাক্ত রিওভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। এই ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যা মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের শরীরেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সংক্রমিত প্রাণীর হাঁচি-কাশি, লালা, মলমূত্র এবং দূষিত খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

রিওভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত শ্বাসকষ্ট, জ্বর, মাথাব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে এটি নিউমোনিয়া বা মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস) সৃষ্টি করতে পারে। শিশু এবং বয়স্করা এই ভাইরাসে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটালে নিপাহ ভাইরাসের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:

⦿ তীব্র মাথাব্যথা
⦿ প্রচণ্ড জ্বর
⦿ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
⦿ মুখ দিয়ে লালা ঝরা
⦿ আবোল তাবোল কথা বলা

যদি ভাইরাসটি শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়, তাহলে জ্বর, হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণ হলে বমি এবং ডায়রিয়া হতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

রিওভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষের দেহে ছড়ায়। তাই প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করুন:

⦿ খেজুরের কাঁচা রস পান করা থেকে বিরত থাকুন।
⦿ গাছের আধখাওয়া ফল বা মাটিতে পড়ে থাকা ফল খাবেন না।
⦿ যেকোনো ফল বা সবজি খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
⦿ অপরিষ্কার হাত নাকে-মুখে দেওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন।
⦿ বাইরে থেকে ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

রিওভাইরাসে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হবেন না। এই ভাইরাসের জন্য সরাসরি কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই, তবে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মৃদু সংক্রমণ সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যদি মস্তিষ্কে প্রদাহ বা শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


রিওভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সচেতনতা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। তাই আতঙ্ক নয়, সতর্ক হোন এবং সুস্থ থাকুন। প্রযুক্তির বিশ্ব ব্লগে আপনাকে নিয়মিত পড়ার আমন্ত্রণ জানাই। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)

নবীনতর পূর্বতন